কবিতা

শত্রুর বোঝা
কারিমুল ইসলাম

দলে দলে পালাইছে সবে, মক্কাভূমি ছেড়ে
আব্দুল্লাহর ব্যাটা মহম্মদ আসিছে ফিরে
শত কষ্ট দিয়েছি তারে, বারোটি বছর ধরে
পাগল বলে হেসেছি কভু মেরেছি পাথর ছুড়ে
সিজদাবনত হলে নবী চাপাতে তাঁর ঘারে
উটের নাড়িভুড়ি, মায়া জাগেনি কভু অন্তরে
বংশহীন বলে কভু দিয়েছি বিদ্রুপের ঝুলি
কখনও কবিতার ভাষায় দিয়েছি গালাগালি
শেষে মারিবার তরে দাড়িয়েছিনু যে সময়
অতিষ্ঠ নবী রাতের আধাঁরে নিলেন বিদায়
সে আজ ফিরিছে, সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ
কেবা পড়ে রইবে হেথায়, থাকিতে মান হুঁশ
কেবা ভোলে বারো বছরের কঠোর যাতনা
নিশ্চয় তাঁর মুখে উতলে উঠিবে প্রতিশোধের ফেনা

পথের মাঝে একটি বুড়ি পড়ল পিছিয়ে
মালপত্র সব ঝোলায় ভরে নিয়ে
সন্তানরাও ছেড়ে গেল, কেউ নিলনা সাথে
শেষে বুঝি মরতে হবে মহম্মদের হাতে
হঠাৎ কোথা হতে, সুদর্শন এক মানব
হাজির হল, বদনে ভরা নুরের চমক
কহিলেন, “বুড়ি মা! কোথায় যাবেন একা
মালপত্র সব গুছিয়ে কেন পথের ধারে রাখা ”
বলিলেন, “বাছা আসিছে মহম্মদ, নিষ্ঠুর অতি
প্রতিশোধ নিতে পারে, করতে পারে ক্ষতি,
তাই সবাই পালিয়েছে যেথা, আমিও যাবো সেথা
কিন্তু কাবু হয়েছি আমি, পিঠে বড় ব্যাথা ”
কহিলেন সে যুবা, ভয় কি মা আমি আছি সাথে
তোমার বোঝা তুলিয়া নিলাম নিজ পিঠে

দরদ মাখা কন্ঠে, শুধাইলেন বুড়ি মা
“কে বা তুমি বাছা? কে বা তোমার মা?”
বলিলেন,”মা, আগে চলুন, নিরাপদ স্থানে
তারপর দেব পরিচয়,দেব সবার সনে। ”
পৌছায়ে যথা স্থানে, বুড়ি কহিলেন সবারে
কেমনে আগুন্তক, উপকার করিল তারে
যুবকেরা অধোমুখে, মাফি চাই সমস্বরে
ভুল ভেবে তোমার ভয়ে এসেছি দেশান্তরে
অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমারে নিঠুর হয়ে
আজ বুঝিলাম, কত মহান তোমার হিয়ে
হাস্য মুখে করলেন মাফ সবারে তিনি
বুড়িমাও লজ্জিত হলেন তাহাকে চিনি
কহিলেন, “শত্রুর বোঝা শিরে নেয় যে জন
সে জন রসুল, সন্দেহ করেনা আর মন। “